Thursday, August 12, 2010

এক বিকালের গল্প

১০ আগস্ট, ২০১০ কিচেনার, কানাডা

গত শনিবার বিকালে আকাশে অল্প মেঘ ছিল, আর অল্প রোদ্দুর মেঘ-রোদ্দুরের খেলা চলছিল। আমরা ঠিক করলাম বেড়াতে যাবো! কোথায়ে যাওয়া যায়? কাছেই একটা পার্ক রয়েছে, আধঘন্টা লাগবে বাসে পার্ক বললে অবশ্য তার গাল ফুলবে, আসলে পার্ক এর চেয়ে অনেকটাই বড় নাম Laurel Creek Conservatory। যাই হোক বাসে করে সেখানে এসে তো পৌঁছোলাম কিন্তু গেট আর খুঁজে পাইনা! পার্কের চৌহদ্দির বাইরে দিয়ে হাঁটছি ত হাঁটছি জলের ওপারে দেখা যাচ্ছে বিরাট জলাশয়, ঘন নিবীড় গাছপালা, কিন্তু ভেতরে ঢোকা যাচ্ছেনা! হটাৎ দেখি বেশ কয়েকটা আপেল গাছ লাল-লাল ফলে ভরে রয়েছে, কিন্তু তারা সব বেড়ার ওপারে! একটু মন খারাপ করে আপেল ফল টক্‌ ইত্যাদি ভেবে মুখ ঘুরিয়েছি, দেখি পথের ধারে একটা ন্যাস্‌পাতি গাছ অনেক ফল ধরেছে, কিন্তু রাস্তার ধুলো-ধোঁয়ায় মলিন। একটা ফল নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আণমনে কামড় বসিয়েছি আরে!! মিষ্টি তো বটেই, আর তার সঙ্গে কি টাটকা-তাজা! বাজ়ারের ফলের চেয়ে ঢের ভাল! ফিরে গিয়ে গাছদাদার কাছ থেকে আরও কটা ফল নিলাম আর তারপর গেটও খুঁজে পেলাম। ভেতরে গিয়ে যায়গাটা বেশ ভাল লাগলো চারপাশে সবুজে সবুজ আর পথের ধারে অজস্র বুনোফুল! জঙ্গলের মধ্যে তিনটে trail (পায়ে চলা শুঁড়ি পথ)—Green, Blur আর Red। আমরা প্রথমে Green trail এ হাঁটতে শুরু করলাম। ঘাসে ঢাকা পথ, বেশ হাঁটছি, হটাৎ মনে হল সামনে কি যেন ছিটকে ছিটকে সরে যাচ্ছে!

খেয়াল করে দেখি অজস্র ব্যাঙ ছোট ছোট, বেশ রঙচঙে আমাদের প্রতি পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে জল ছেঁটার মত দুপাশে ছিটকে যাচ্ছে। কোনমতে লাফিয়ে লাফিয়ে সেই ব্যাঙসরনী পার হবার চেষ্টা করছি, এমন সময়ে পাশ দিয়ে সরসর করে চলে গেল একটা সাপ!ব্যাঙের রাজত্বে সাপ তো থাকবেই!আমার অবস্থা তখন দেখার মত! একটা পাতলা চটি পরে গেছি কোথায়ে পা ফেলবো বুঝতে পারছিনা!তাড়াতাড়ি করে সেই ব্যাঙ রাজত্ব পেরনোর পরে হাঁটতে হাঁটতে আমরা এসে পৌছলাম জলের ধারে। সেখানে তখন নানারকম মজা চলছে! দুটি কুকুর-বালককে নিয়ে তাদের পালিকা-মা এসেছেন খেলা করতেতিনি একটা প্লাস্টিকের ব্যাটন মত জিনিষ জলে ছুঁড়ে দিচ্ছেন আর কুকুরদুটো তিরের মত ছুঁটে জলে ঝাঁপ দিয়ে সেগুলো তুলে আনছে!খুবই মজা পাচ্ছে তারা আর মাঝে মাঝে জল থেকে উঠে গা ঝাড়া দিয়ে আশপাশের লোককে ভিজিয়ে দিচ্ছে!একসময়ে খেলা শেষ হল মা যেই বক্‌লস্‌ বার করেছেন, একজন দিল ছুটমা ছুটল তার পেছনে! আর একজন তখন ওখানে বসে থাকা এক দিদিমাকে নানা অঙ্গভঙ্গি করে request করতে লাগলো যদি খেলাটা চালিয়ে যাওয়া যায় দিদিমাতো খুব খুশি! কুকুরতো খুবই উত্তেজিত হয়ে আগেভাগে ছুটে গিয়ে জলে ঝাঁপ দিয়েছে, আর এদিকে দিদিমা ঠিক কায়দা করতে পারেননি ... ব্যাটন এসে পরেছে তার নিজেরই পায়ের কাছেকুকুর আর তা জলে খুঁজে পায়না! দুজনেই বোকা বনে গেছেকুকুর হতাশ, আর দিদিমা লজ্জিত! এই সময়ে এক কাকু নৌকাবিহার করছিলেন তার কুকুরছানাটিকে নিয়ে --- সে তো এই সব কান্ডকারখানা দেখে জলে ঝাঁপ দেয় আর কি!

এরপর এরা সব চলে গেলে খানিক পরে এল কচিকাঁচাদের দল। তারাতো এসেই জলে ঝাঁপ দিয়ে প্রবল হুটোপাটি জুড়ে দিল আর সঙ্গে খিলখিল হাসি! এদের কান্ডকারখানা দেখছি, এমন সময় এক ভদ্রলোক বিচিত্র পোষাকে সেখানে উপস্‌থিত হলেন তার কোমরে করোটি লাগানো কালো বেল্ট, হাতে মাছ ধরার ছিপ! তিনি এসেই মাছ ধরা সম্মন্ধে আমাদের অনেক উপদেশ দিলেন, তারপর ছিপ হাতে জলের ধারে position নিলেন। আমরা তো তার কান্ডকারখানা দেখে থ!একে তো বাচ্চারা পাশেই অমন হুটোপাটি করছে, তার ওপর তিনি প্রতিবার ছিপ ফেলার মিনিটখানিকের মধ্যেই তা সন্তর্পনে তুলে আনছেন... কিছু জলজ গাছপালা সহ! তার হাবভাব দেখে মনে হল মাছেরা সব জলের তলায়ে হাঁ করে ছুটোছুটি করছে টোপ গেলার জন্য --- গিলতে যে পারছেনা, তা তাদেরই অপরাধ! যা হোক, এই খেলা খানিকক্ষণ চলার পরে তিনি বাচ্চাদের এবং সম্ভবতঃ মাছেদের নির্বুদ্ধিতায়ে বিরক্ত হয়ে খানিক দূরে সরে গেলেন, আর সূয্যিমামাও পাটে যাবার তোড়জোড় শুরু করলেন। এবার আমাদের ফেরার পালা ... আর ব্যাঙ সরনী নয়, এবার আমরা blue trail ধরে গুটিগুটি পার্ক থেকে বেরিয়ে এলাম!

1 comment: